শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বলতেন, ব্রহ্মপুত্র নদই তাঁর ‘মাস্টারমশাই’। ব্রহ্মপুত্রের কাছ থেকে শিখেছেন অনেক কিছু। এ ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে বসে তিনি এঁকেছেন কতশত ছবি। স্মৃতিবিজড়িত শহরের পরিচিতিই হয়ে উঠেছে ‘জয়নুলের শহর ময়মনসিংহ’।
শহরে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে আজ শুক্রবার শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী বাংলা আর্ট ফেস্ট বা বাংলা চারুকলা উৎসব। উৎসবটি জয়নুল আবেদিনের নামে উৎসর্গ করা হয়েছে।
উৎসব ঘিরে ময়মনসিংহ শহরের বিজিবি পার্ক এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় সাজানো হয়েছে ময়মনসিংহের বিভিন্ন ঐতিহ্যের স্মারক দিয়ে। জড়ো হয়েছেন দেশ-বিদেশের ৫০০ শিল্পী। শিক্ষানবিশ হিসেবে থাকছে ময়মনসিংহের ৭টি স্কুলের ২০০ খুদে আঁকিয়ে। এ উৎসবে খ্যাতনামা ও নবীন শিল্পীরা ছবি আঁকবেন এবং অন্যান্য শিল্পকর্ম তৈরি করবেন। উৎসবের শেষ দিন ছবিসহ অন্যান্য শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হবে।
শুক্রবার দুপুরে বিজিবি পার্কে এ উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও বৃহস্পতিবার থেকেই চলে প্রস্তুতি। সারা দেশের বিভিন্ন চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও শিল্পীদের পদচারণে মুখর ব্রহ্মপুত্রপাড়ের বিজিবি পার্ক। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিজিবি পার্কে গিয়ে দেখা যায়, পৌষের সকালে সূর্যের দেখা সবে মিলছে। হালকা রোদ আর কুয়াশার মিশেলে সুন্দর এক সকাল। উৎসবস্থলের পাশ ঘেঁষেই বয়ে চলছে শীতের নিরুত্তাপ ব্রহ্মপুত্র। ব্রহ্মপুত্রপাড়ের বিজিবি পার্ক যেন সেজেছে বর্ণিল রূপে। নদের পাড় ঘেঁষে থাকা গাছগুলো সাজানো হয়েছে নান্দনিকভাবে।
কোনো গাছে ঝোলানো হয়েছে পাটের শিকায় মাটির তৈজসপত্র, আবার কোনোটিতে শোভা পাচ্ছে পালতোলা নৌকা। উৎসব উপলক্ষে পুরো পার্কটি এভাবেই সাজানো হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় আর্ট বাংলা ফাউন্ডেশন আয়োজন করেছে এ উৎসবের। উৎসবের উদ্বোধন করেন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ছেলে প্রকৌশলী মঈনুল আবেদিন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। রুচির দীনতা দূর করার উদ্দেশ্যে এ আয়োজন করা হয়েছে। পুরো আয়োজনে মানুষ খুঁজে পাবে নিজেদের ঐতিহ্য।
উৎসবের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, যেসব দেশের সংস্কৃতি বেশি সমৃদ্ধ, সেসব দেশ সব দিক থেকেই সমৃদ্ধ। নিজেদের সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ করতে পারলেই বাংলাদেশের সমৃদ্ধ হবে।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ছেলে মঈনুল আবেদিন বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদ ছিল আমার বাবার কাছে শিক্ষাগুরু। এ ব্রহ্মপুত্রের কাছ থেকেই তিনি শিখেছেন অনেক কিছু।’ উপস্থিত খুদে আঁকিয়েদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভালো মনের মানুষ হলে সবাই ভালো ছবি আঁকতে পারবে।
ফ্রান্সপ্রবাসী চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ জয় বাংলা বলে নিজের বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘এ জয় বাংলার জন্য আজ এত সুন্দর পরিবেশে আমরা এত সুন্দর আয়োজন করতে পেরেছি। খুব ভালো লাগছে ময়মনসিংহে এত সুন্দর আয়োজন দেখে। ফ্রান্সে গিয়ে সেখানে সংস্কৃতির আদান-প্রদান দেখে আমার চোখ খুলে গেছে।’ ময়মনসিংহের মানুষের প্রশংসা করে শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, ময়মনসিংহের মানুষের ভাষার মধ্যে প্রাণ আছে। এ অঞ্চলের মানুষ খুবই উদার ও সরল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ সবাইকে ধন্যবাদ দেন। অনুষ্ঠানে চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমদের হাতে আজীবন সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।