দি হাঙ্গার প্রজেক্ট
THE HUNGER PROJECT
আত্মশক্তিতে বলীয়ান ব্যক্তি কখনও দরিদ্র থাকতে পারেনা
অ্যাডভোকেসি এনজিও (২৮ জেলা ৫২টি উপজেলার ১৮৫টি ইউনিয়ন)
ক্লাস্টার সমূহ:
১) মাদক ও বাল্যবিবাহ
২) শিক্ষা বিষয়ক কার্যক্রম- কন্যাশিশুদের জন্য নিরাপদ বিদ্যালয় ক্যাম্পেইন
৩) দারিদ্র দূরীকরন- আত্ম কর্মসংস্থান সৃষ্টি
৪) হেলথ এন্ড হাইজিন- কৈশরকালীন প্রজনন স্বাস্থ্য
৫) নদী ও পরিবেশ
৬) নারী ও শিশু অধিকার- নারী ও কন্যাশিশুর ক্ষমতায়ন
বিশ্ববিস্তৃত ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূরীকরণের ব্রত নিয়ে একটি আর্ন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাব্রতী সংস্থা হিসেবে ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে দি হাঙ্গার প্রজেক্টের যাত্রা শুরু হয়। ইউরোপ-অষ্ট্রেলিয়াসহ এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাতিন আমেরিকার ২২টি দেশে এর কার্যক্রম বিস্তৃত। ১৯৯১ সালে এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধন প্রাপ্তির মাধ্যমে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট কাজ শুরু করে।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট গতানুগতিক কোন এনজিও বা দাতা সংস্থা নয়। এটি একটি বিশ্বাস, একটি প্রতিশ্রæতি ও একটি সামাজিক আন্দোলন। বিশ্বাসটি হলো, প্রতিটি মানুষ অমিত সম্ভাবনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। জন্মগতভাবে সেই অমিত সম্ভাবনাই তাকে করতে পারে দারিদ্র্যমুক্ত এবং আত্মনির্ভরশীল। মানুষ যদি তার অর্ন্তর্নিহিত ক্ষমতার সৃজনশীল বিকাশের সুযোগ পায়, সে যদি আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়, তাহলে সে নিজেই তার ভাগ্যোন্নয়নের দায়িত্ব নিতে পারে। নিজ ভবিষ্যতের কারিগরে পরিণত হতে পারে। এ চেতনাবোধ থেকেই দি হাঙ্গার প্রজেক্ট সারাদেশে একটি গণজাগরণ সৃষ্টি করতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। এই গণজাগরণের লক্ষ্য সমাজের প্রতিটি মানুষকে উজ্জীবিত ও সংগঠিত করা, যাতে প্রত্যেক উজ্জীবক ও সামাজিকভাবে সংগঠিত মানুষ নিজেদের জীবনের হাল নিজেরাই ধরতে পারে। নিজেদের অবস্থান থেকে নিজস্ব সম্পদকে প্রাথমিক পুঁজি করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করতে একক ও যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়।
সংস্থার লক্ষ্যঃ আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে একদল স্বেচ্ছাব্রতী তৈরি করা, তৃণমূলের নারীদের মধ্যে নেতৃত্ব বিকাশ, স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে কার্যকর ও শক্তিশালীকরণ এবং অ্যাডভোকেসি করা এবং সামাজিক জোট গড়ে তোলা।
কার্যক্রমের বিবরণঃ আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে জনগণকে ক্ষমতায়িত ও সংগঠিতকরণ; (২) উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হিসেবে নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা অর্জন; (৩) স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে কার্যকর ও শক্তিশালীকরণ; এবং ৪. বাংলাদেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে অ্যাডভোকেসি ও মৈত্রী/জোট গড়ে তোলা।
কমিউনিটি চালিত উন্নয়ন প্রক্রিয়া
স্থায়ীভাবে ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূর করতে হলে প্রয়োজন বিকল্প ধারার উন্নয়ন কৌশল। যার মূল লক্ষ্য হবে মানুষকে জাগিয়ে তোলা, সংগঠিত করা ও তাদের সামর্থ্যরে বিকাশ ঘটানো। তাদেরকে আত্মশক্তিতে বলীয়ান করা। দেশের মানুষ জাগ্রত, সংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী হলেই বাংলাদেশ আত্মনির্ভরশীল হবে। কারণ মানুষ সংঘবদ্ধ হলেই পুরো কমিউনিটি সম্পৃক্ত হয় এবং কমিউনিটি চালিত প্রক্রিয়ার (ঈড়সসঁহরঃু-ষবফ অঢ়ঢ়ৎড়ধপয) সূচনা হয়। দি হাঙ্গার প্রজেক্ট নারী ও তরুণদের অগ্রাধিকার দিয়ে একটি কমিউনিটি চালিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আসছে। এই কমিউনিটি চালিত প্রক্রিয়া চারটি স্তম্ভের (ঢ়রষষবৎ) ওপর প্রতিষ্ঠিত। স্তম্ভগুলো হলো:
১. তৃণমূলের জনগণকে ক্ষমতায়িত ও সংগঠিতকরণ
ক. তৃণমূলে সামাজিক পুঁজি গড়ে তেলা এবং নির্ভরশীলতার মানসিকতায় পরিবর্তন আনা; খ. প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি উন্নতকরণ; গ. কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে কমিউনিটির মানুষের সামর্থ্য বৃদ্ধিকরণ; ঘ. তৃণমূলে মানুষের জন্য শিক্ষা ও তথ্যের অধিকার নিশ্চিতকরণ; ঙ. সমষ্টিগতভাবে নিজেদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সামাজিক ঐক্য সৃষ্টি এবং কমিউনিটির মানুষকে ক্ষমতায়িত করা
চ. তৃণমূলে খাদ্য এবং জলবায়ু নিরাপত্তা বৃদ্ধি ইত্যাদি।
২. নারী ও কন্যাশিশুদের ক্ষমতায়িত করা
ক. নারী নেতৃত্ব বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি; খ. নারীদের জন্য আয় বৃদ্ধিমূলক কাজের সুযোগ তৈরি; গ. নারী ও কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি; ঘ. সরকারি সেবায় অভিগম্যতা বৃদ্ধি; ঙ. নারী ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন; চ. সর্বস্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর ভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টি ইত্যাদি।
৩. স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ
ক. কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সামর্থ্য বৃদ্ধি; খ. স্থানীয় সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ; গ. সরকারি সেবার গুণগত মান উন্নতকরণে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি।
৪. অ্যাডভোকেসি/সামাজিক জোট
ক. বিকেন্দ্রীকরণ ও ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আন্দোলন জোরদারকরণ; খ. সুশাসনের জন্য নীতি-নির্ধারকদের প্রভাবিত করার লক্ষ্যে সিভিল সোসাইটি নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ ; গ. জেন্ডার সমতা ও শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ার জন্য সামাজিক জোট গড়ে তোলা ইত্যাদি।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর নীতিমালা (চৎরহপরঢ়ষবং)
ক্ষুধামুক্তির কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট দশটি নীতিকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে। দি হাঙ্গার প্রজেক্ট তার সকল কৌশলগত কার্যক্রম এই নীতিগুলোর ওপর ভিত্তি করেই তৈরি করে। নিম্নে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর দশটি নীতিমালা তুলে ধরা হলো:
১. মানবিক মর্যাদা: প্রতিটি মানুষ তার জন্মের সময় খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কাজের অধিকারসহ সম-মর্যাদা ও সম-অধিকার নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। প্রত্যেক মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই সৃজনশীল, কর্মক্ষম, স্বয়ংসম্পূর্ণ, উৎপাদনশীল এবং দায়িত্বশীল। মানুষের সাথে ক্ষুধা-দারিদ্র্যের লক্ষ্যে সুবিধাভোগী হিসেবে আচরণ করা অনাকাক্সিক্ষত, যা তাদের মর্যাদাকে ক্ষুণœ করে। বরং তারা ক্ষুধামুক্তির চাবিকাঠি।
২. নারী-পুরুষের সমতা: সমাজে নারী-পুরুষের সমতা অর্জন করা ক্ষুধা-দারিদ্র্য অবসান করার অন্যতম পূর্বশর্ত। নারীরা মৌলিক চাহিদা পূরণের প্রধান দায়িত্ব বহন করা সত্তে¡ও পদ্ধতিগতভাবে তাদেরকে সম্পদ, স্বাধীনতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখা হচ্ছে।
৩. ক্ষমতায়ন: সামাজিক বাধাগুলো অতিক্রম করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ এবং সংগঠিত করা প্রয়োজন, যাতে করে তারা নিজেদের ও সমাজের উন্নয়নের লক্ষ্যে নিজেরাই দায়িত্ব গ্রহণ করে।
৪. কৌশলগত কার্যক্রম: বিরাজমান দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধা অবসানের জন্য এমন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন যা পদ্ধতিগতভাবে বৃহদায়তন পরিবর্তনের সূচনা ঘটাবে। সময়ে সময়ে এই কার্যক্রমের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব যাচাই করতে হবে এবং বিরাজমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অধিক প্রভাব সৃষ্টিকারী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫. পারস্পরিক সম্পৃক্ততা: আমাদের কার্যক্রমগুলোর পরিকল্পনা এমনভাবে সন্নিবেশিত করা হয়েছে যাতে সকল মানুষ ও প্রকৃতির মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি হয়। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য একটি বা দুটি দেশের সমস্যা নয়, এটি গোটা বিশ্বেরই সমস্যা। এই সমস্যা অবশ্যই ‘দাতা-গ্রহীতা’ সম্পর্কের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব নয়, বরং বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে সম-সহযোগিতার ভিত্তিতে ক্ষুধা-দারিদ্র্য অবসানের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
৬. স্থায়িত্বশীলতা: ক্ষুধা অবসানের কার্যক্রম অবশ্যই স্থানীয়ভাবে, সামাজিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে ও পরিবেশগতভাবে সমাধান হতে হবে, যাতে তা স্থায়িত্বশীল হয়।
৭. সামাজিক রূপান্তর: জনগণের আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের কার্যক্রমগুলো দুর্নীতি, সশস্ত্র সংঘাত, বর্ণবিদ্বেষ ও নারীর প্রতি সহিংসতার মত ঘটনার কারণে চাপা পড়ে যায়। এই ঘটনাগুলো অতি পুরাতনÑপিতৃতান্ত্রিক মানসিকতারই ফসল। পিতৃতান্ত্রিক এই মানসিকতার রূপান্তর অবশ্যই ঘটাতে হবে। এই রূপান্তরই হবে সংগঠিত সমাজ গড়ে তোলার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।
৮. সামগ্রিক পদ্ধতি: ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূরীকরণের কার্যক্রমের সাথে যথোপযুক্ত কাজ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশের ভারসাম্যতা, ন্যায়পরায়ণতা, সামাজিক সুষ্ঠু বিচার ইত্যাদি অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। এই বিষয়গুলো অর্জনের লক্ষ্যে সামগ্রিক ও সম্মিলিতভাবে একত্রে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হলে এগুলো টেকসইভাবে দূর হবে।
৯. বিকেন্দ্রীকরণ: স্থানীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও স্থানীয় সমষ্টিগত উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে কোনো কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সফল হয়। এর জন্য প্রয়োজন জনগণের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করার মানসিকতাসম্পন্ন কার্যকর জাতীয় ও স্থানীয় সরকার।
১০. নেতৃত্ব: ক্ষুধা-দারিদ্র্য অবসানের জন্য প্রয়োজন নতুন প্রজন্মের স্থানীয় নেতৃত্ব। উপর থেকে চাপিয়ে দেয়ার মানসিকতাসম্পন্ন ও কর্তৃত্বপরায়ণ নেতা নয়, বরং এমন নেতা যিনি জনগণের অন্তর্নিহিত শক্তিকে জাগিয়ে তুলবেন এবং জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা সৃষ্টি করবেন।
এসডিজি ইউনিয়ন গড়ে তোলা
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৯৩টি দেশের রাষ্ট্র/সরকার প্রধানেরা ‘ট্রান্সফরমিং আওয়ার ওয়ার্ল্ড: দ্যা ২০৩০ এজেন্ডা ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ শিরোনামের একটি কর্মসূচি অনুমোদন করে, যা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) নামে পরিচিত। বিশ্বমানবতার সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে এটি একটি কর্মপরিকল্পনা, যা বিশ্বব্যাপী শান্তি, সমৃদ্ধি ও কার্যকর অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত করবে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রত্যাশা, ২০৩০ এজেন্ডা তথা এসডিজি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাবে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এবং অর্জিত হবে পরিবেশের ভারসাম্য। এসডিজির ১৭টি অভীষ্ট আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত হলেও, এগুলো অর্জিত হতে হবে স্থানীয়ভাবে। তাই এসডিজির স্থানীয়করণ (ষড়পধষরুধঃরড়হ) জরুরি।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ‘এসডিজি ইউনিয়ন’ গড়ার লক্ষ্যে সরকার, জনগণ ও স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি মিলে ত্রি-পক্ষীয় পার্টনারশিপ বা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাদের অংশগ্রহণে বিশেষ উজ্জীবক প্রশিক্ষণ, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ স্বেচ্ছাসেবক সৃষ্টির জন্য ‘উজ্জীবক প্রশিক্ষণ’, নারীর ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে ‘নারী নেতৃত্ব বিকাশ’ শীর্ষক ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণ এবং সমাজের প্রতি তরুণদের দায়বদ্ধতার মানসিকতা সৃষ্টিতে ‘ইয়ূথ লিডারশিপ প্রশিক্ষণ’ প্রদান করা হয়। এসব প্রশিক্ষণের অন্যতম লক্ষ্য হলো মানসিকতার পরিবর্তন, যাতে অংশগ্রহণকারীরা ক্ষুধামুক্ত ও আত্মনির্ভরশীল তথা এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে ওঠে।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর পক্ষ থেকে জনঅংশগ্রহণে ওয়ার্ডসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের উন্মুক্ত বাজেট অধিবেশন আয়োজনে সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের কাজের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় নাগরিকদের সম্মিলনে স্থায়ী কমিটিগুলো সক্রিয় করা হচ্ছে। পরিষদ এবং উজ্জীবকদের প্রচেষ্টায় ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়মুখী করা এবং বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ পরিচালনা করা হচ্ছে। বাল্যবিবাহ ও যৌতুক প্রতিরোধ এবং বিবাহ নিবন্ধনের লক্ষ্যে উজ্জীবকরা নিবেদিতভাবে কাজ করছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে উজ্জীবকদের অনুপ্রেরণায় স্বল্পবিত্তের জনগণকে নিয়ে সারাদেশে দুই হাজারের অধিক স্থানীয় সংগঠন গড়ে উঠেছে, যার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সঞ্চয় সৃষ্টি হয়েছে। এভাবেই জনগণের সার্বিক অবস্থা উন্নয়নে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাব্রতীগণ, এলাকার জনগণ ও ইউনিয়ন পরিষদ একটি সম্মিলিত প্রত্যাশার ভিত্তিতে সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট মনে করে, ২০৩০ এজেন্ডা বা এসডিজি’র লক্ষ্য ও টার্গেটের অবিভাজ্যতা, পারস্পরিক সম্পৃক্ততা ও সংযুক্ততার গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী ও তাৎপর্যপূর্ণ। এগুলো আংশিক বা বিচ্ছিন্নভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। শুধু শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতির ওপর প্রকল্প/কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে এসডিজি অর্জন করা যাবে না, এর জন্য আরও প্রয়োজন হবে শান্তি প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্র গঠন, মানবাধিকার বাস্তবায়ন ও সুশাসন কায়েম করার মতো ইস্যুগুলোর প্রতি মনোনিবেশ। অর্থাৎ এসডিজি-১৬ এর আলোকেই অন্যান্য অভীষ্টগুলো অর্জিত হতে হবে। এর জন্য অবশ্য প্রয়োজন একধরনের হলিস্টিক, ঊর্ধ্বমুখী ও সুসংহত ‘কমিউনিটি-লেড ডেভেলপমেন্ট’ অ্যাপ্রোচ, যার উদ্দেশ্য হবে উন্নয়নের জন্য সামাজিক পরিবর্তন, অনুন্নয়নের আংশিক প্রতিকার নয়। এর জন্য প্রয়োজন হবে সমাজে নারী, পুরুষ ও তরুণদের জন্য তাঁদের জীবনের হাল ধরার জন্য ক্ষমতায়ন ও সুযোগ সৃষ্টি করা। এই প্রক্রিয়ার জন্য আরও প্রয়োজন হবে নাগরিকদের পরিবর্তনের রূপকার হিসেবে সক্রিয়করণ; তৃণমূল সংগঠনের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের কণ্ঠকে উচ্চকিত করার সুযোগ প্রদান; গতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি সৃষ্টি এবং অনুঘটকের ভূমিকা পালনকারী একটি কার্যকর ও দায়বদ্ধ স্থানীয় সরকারব্যবস্থা।
প্রসঙ্গত, এমডিজি ইউনিয়ন গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দি হাঙ্গার প্রজেক্ট তার কর্মপ্রচেষ্টার ফলে যেসব ইউনিয়ন গণকেন্দ্রিক উন্নয়নের দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেতে পেরেছে এমন কয়েকটি ইউনিয়ন হলোÑ বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা; খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বটিয়াঘাটা; মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সবগুলো ইউনিয়ন; রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল ও মৌগাছি, নওগাঁর পতœীতলা উপজেলার সবগুলো ইউনিয়ন; রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার সবগুলো ইউনিয়ন; টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ও ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া; ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর ইশ্বরদিয়া; মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আমতৈল ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর; কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার আজগরা; বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার; মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দিঘী ইউনিয়ন ইত্যাদি।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর কর্মসূচি
ক. স্বেচ্ছাব্রতী উজ্জীবক তৈরি
প্রত্যেক এলাকার বা ইউনিয়নে অগ্রসর নারী-পুরুষদের মধ্য থেকে বাছাইকৃত একদল মানুষকে চার দিনের উজ্জীবক প্রশিক্ষণের (মূলত স্ব-শিক্ষণের) মাধ্যমে স্বেচ্ছাব্রতী উজ্জীবক হিসেবে গড়ে তোলা হয়। প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য হলো অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এমন আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মোপলব্ধি সৃষ্টি করা, যাতে তারা নিজেদের অফুরন্ত সম্ভাবনার বিকাশ ঘটাতে বদ্ধপরিকর হন। একইসাথে স্থানীয় নেতৃত্ব হিসেবে সমাজ পরিবর্তনের জন্য নিজ নিজ এলাকায় অনুঘটক হিসাবে কাজ করতে এগিয়ে আসেন। প্রত্যেক উজ্জীবক এমন একজন স্বেচ্ছাব্রতী মানুষ যিনি নিজ দায়িত্বে আপন ভাগ্য গড়েন এবং অন্যকে তার ভাগ্য গড়তে উজ্জীবিত, ক্ষমতায়িত ও সংগঠিত করেন। মূলত স্থানীয় সম্পদ কাজে লাগিয়ে স্থানীয় পরিকল্পনার ভিত্তিতে এলাকার উন্নয়নে নিবেদিত থাকার মাধ্যমে সারাদেশে বর্তমানে দেড় লক্ষাধিক উজ্জীবক ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কাজে অনবদ্য ভূমিকা রাখছেন। একে অপরের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার কারণে উজ্জীবকরা এখন একটি সংগঠিত সামাজিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। বস্তুত, উজ্জীবকরাই দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর কার্যক্রম পরিচালনার মূল চালিকাশক্তি।
খ. ‘নারী নেতৃত্ব বিকাশ’ প্রশিক্ষণ ও বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক
বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার। সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে সীমাহীন বৈষম্য ও বঞ্চনার মধ্য রেখে ক্ষুধামুক্ত ও আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নপূরণ অসম্ভব। এ উপলব্ধি থেকে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট নারী নেতৃত্ব বিকাশের প্রয়োজনে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ের একদল নারীকে ক্ষমতায়িত, সংগঠিত ও তাদের সামর্থ্য বিকাশের লক্ষ্যে নিবিড় ও ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ-কর্মশালা পরিচালনা করে আসছে। প্রশিক্ষণের প্রথম ধাপ এবং ভিত্তি হলো ‘নারী নেতৃত্ব বিকাশ’ শীর্ষক ফাউন্ডেশন কোর্স। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একঝাঁক নারী নেতৃত্ব বর্তমানে স্থানীয় পর্যায়ে বাল্যবিবাহ, যৌতুক, পারিবারিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানিসহ নারীর প্রতি সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারাভিযান পরিচালনা করছে এবং প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। বর্তমানে প্রায় দশ হাজার নারীনেত্রী তাদের যার যার অবস্থান থেকে সামাজিক দায়বদ্ধতার ভিত্তিতে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। তৃণমূল থেকে উঠে আসা নতুন প্রজন্মের নারীনেত্রীরা ‘বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক’ গড়ে তুলছে এবং নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক-এর ৪৪টি জেলা, ৪৬টি উপজেলা এবং ১৯৭টি ইউনিয়ন কমিটি গঠিত হয়েছে, যে কমিটিগুলোতে ৩,৬৭৩ জন নারীনেত্রী সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
গ. ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার
সংগঠনটি পরিচালিত হয় ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা এবং মূলত তাদের স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। তরুণ প্রজন্মকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের মেধা ও সৃজনশীলতার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটানো এবং তাদের মধ্যে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার মানসিকতা সৃষ্টি করা ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার-এর উদ্দেশ্য। প্রশিক্ষিত ‘ইয়ুথ লিডার’রা সমাজ গঠনের কাজে নানামুখী অবদান রাখছে। এর সদস্যগণ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের সংগঠিত করার মাধ্যমে শিক্ষা, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, নারীর অবস্থান পরিবর্তনসহ নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ও প্রচারাভিযান পরিচালনা করছে। বর্তমানে তারা ‘অ্যাকটিভ সিটিজেন ইয়ুথ লিডারশিপ ট্রেনিং’ পরিচালনা ও বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করছে। সারা দেশে গণিত অলিম্পিয়াড পরিচালনা করছে। বর্তমানে প্রায় এক লাখ তরুণ-তরুণী ‘ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার’-এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে।
ঘ. গণগবেষণা
গণগবেষণার মূল চালিকাশক্তি সমাজের দরিদ্র ও অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী। সামাজিকভাবে বঞ্চিত, ক্ষমতাহীন, অসমতার শিকার এই মানুষগুলোই দারিদ্র্যের কারণগুলো সম্পর্কে সবচাইতে ভালো জানেন। তারা সমস্যাগুলো নিয়ে নিজেরা মাথা খাটালে সমাধানের সবচাইতে ভালো উপায় বের করতে পারেন। গণগবেষণা প্রক্রিয়ায় নিজেদের সমস্যাগুলোকে কেন্দ্র করে গবেষণার মূল কাজটি তারাই করেন এবং ‘বেয়ার ফুট রিসার্চারে’ (ইধৎবভড়ড়ঃ জবংবধৎপযবৎং) পরিণত হন। তারা নিজেরা দারিদ্র্যের কারণগুলো চিহ্নিত করেন। গণগবেষণার এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় তারা নিজেরাই নিজেদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনে একটি সংগঠিত শক্তিতে পরিণত হয়ে ওঠেন। সমাজে তাদের নেতৃত্ব ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেন। দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর গণগবেষণা ইউনিটের উদ্যোগ ও সহায়তায় বর্তমানে এক সহ¯্রাধিক সমিতিতে প্রায় ত্রিশ হাজার দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষ গণগবেষণার সাথে যুক্ত রয়েছেন।
ঙ. স্বেচ্ছাব্রতী প্রশিক্ষক
স্বেচ্ছাব্রতী প্রশিক্ষকগণ ক্ষুধামুক্তি আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক। প্রতিশ্রæতিশীল অগ্রসর উজ্জীবকদের পক্ষ থেকে কিছু ব্যক্তিকে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে স্বেচ্ছাব্রতী প্রশিক্ষক হিসেবে তৈরি করা হয়। এই প্রশিক্ষণ অংশগ্রহণকারীদের নেতৃত্বকে শাণিত করে, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাব্রতী হিসেবে দায়িত্ব নিতে অনুপ্রেরণা যোগায় এবং প্রশিক্ষণ পরিচালনায় দক্ষ করে তোলে। এছাড়াও তাদের প্রশিক্ষণোত্তর সামর্থ্য বিকাশের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে ৩৩৫ জন স্বেচ্ছাব্রতী প্রশিক্ষক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পরিচালনা ও কর্মশালা পরিচালনাসহ জনগণকে সংগঠিত করে গণজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিচালিত সকল কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
চ. ‘গ্রাম উন্নয়ন দল’ (ঠরষষধমব উবাবষড়ঢ়সবহঃ ঞবধস) গঠন
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট স্বেচ্ছাব্রতী ও গ্রামের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে ‘গ্রাম উন্নয়ন দল’ (ভিডিটি) গঠন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, যাতে তারা স্থানীয় সমস্যা চিহ্নিতকরণ, বিশ্লেষণ, অগ্রাধিকার নির্ণয়, পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও তা মূল্যায়ন করতে পারেন। গ্রাম উন্নয়ন দল পিছিয়ে পড়া মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন আয়বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকেন, তাদেরকে আয়মুখী কার্যক্রম গ্রহণে উদ্ধুদ্ধ করেন, সামাজিক সমস্যা সমাধানে নানা ধরনের প্রচার-প্রচারণা পরিচালনা করেন এবং সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাব্রতীদের দ্বারা গ্রাম উন্নয়ন দল গঠিত ও পরিচালিত হয়।
ছ. ‘প্রত্যাশা, প্রতিশ্রæতি ও কার্যক্রম’ বিষয়ক কর্মশালা
স্থানীয় জনগণের মধ্যে প্রত্যাশা জাগানো এবং তাদের উজ্জীবিত ও সংগঠিত করার কাজ শুরু হয় ‘প্রত্যাশা, প্রতিশ্রæতি ও কার্যক্রম’ বিষয়ক কর্মশালার মধ্য দিয়ে। এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে মানুষের মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন হয়, তারা নতুনভাবে ভাবতে শেখে এবং অনুধাবন করতে পারে যে, তারা নিজেরাই নিজেদের ভবিষ্যত বিনির্মাণের মূল কারিগর। এ কর্মশালার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা ক্ষুধামুক্ত এলাকার ভিশন বা প্রত্যাশা তৈরি করে, অগ্রাধিকারভিত্তিক কার্যক্রম চিহ্নিত করে এবং মূলত স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়নের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করে।
জ. ‘সামাজিক স¤প্রীতি ও নাগরিকত্ব’ বিষয়ক কর্মশালা
নাগরিক সচেতনতা তৈরি ও সামাজিক স¤প্রীতি সৃদৃঢ় করার জন্য সারাদেশে ‘সামাজিক স¤প্রীতি ও নাগরিকত্ব’ বিষয়ক কর্মশালা পরিচালনা করা হয়। আমাদের সংবিধানের ৭(১) অনুচ্ছেদে বলা আছে ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’। নাগরিকগণ শুধু নিজেকে মালিক ভেবে ঘরে বসে থাকলে হবে না। প্রকৃত মালিক হলো সে, যে সচেতন, সক্রিয়, সোচ্চার, স্বাধীন, কর্তব্য পালন করে এবং দায়িত্ব নেয়। কর্মশালার মধ্য দিয়ে নাগরিকদের মধ্যে অধিকার, দায়বদ্ধতা, স¤প্রীতিবোধ ও করণীয় বিষয়ক সচেতনতা তৈরি করা হয়। এছাড়া জনগণের মধ্যে নাগরিক অধিকার ও দায়িত্ববোধ সৃষ্টি না হলে কার্যকর ও টেকসই গণতন্ত্রও কায়েম হবে না।
ঝ. দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ
বাংলাদেশের রয়েছে সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদ, বিপরীতে রয়েছে বিশাল জনশক্তি। এই বিশাল জনশক্তির জীবন-জীবিকার নতুন ক্ষেত্র তৈরিতে সহায়তার জন্য দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বিভিন্ন আয়বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে, যার মাধ্যমে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। স্থানীয় চাহিদা ও পরিকল্পনার ভিত্তিতে উজ্জীবক ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে দুই ভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে: (১) মাস্টার ট্রেইনার সৃষ্টি ও তাদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান, এবং (২) সরাসরি স্থানীয় উজ্জীবক ও জনগণকে প্রশিক্ষণ প্রদান। সংগঠনের উদ্যোগে দর্জি বিজ্ঞান, বøক-বাটিক, হস্তশিল্প, মৌ চাষ, নার্সারি প্রতিষ্ঠা, মাশরুম চাষ, বসত বাড়িতে সবজি চাষ, ভার্মি কম্পোস্ট, মাছ চাষ, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন ও কম্পিউটার শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
ঞ. জঙ্গিবাদ ও রাজনৈতিক সহিংসতা রোধ
সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিবাদ রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সহিংসতা হ্রাস করা বিশেষ করে বিবাদমান বিভিন্ন দলের মধ্যে বিদ্যমান সংঘাত শান্তিপূর্ণভাবে রোধ করার লক্ষ্যে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। এর ফলে বিবাদমান রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থানের মানসিকতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং এলক্ষ্যে তারা নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে। এসব উদ্যোগের ফলে অনেকগুলো উপজেলায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মিলে ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ বা আচরণবিধি স্বাক্ষর করেছে এবং শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের মধ্যে বিরোধ নিরসন ও বহুত্ববাদের মানসিকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে অঙ্গীকারবদ্ধ হচ্ছে।
চ. তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা:
সংবিধান অনুযায়ী, জনগণ প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক। এই মালিক তথা জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য জনগণের তথ্য অধিকার তথা তথ্যে অভিগম্যতা নিশ্চিত করা মালিক হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের ভ‚মিকা পালনে সহায়তা করতে পারে। এতে সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারি ও বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি, দুর্নীতি হ্রাস ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত এবং গণতন্ত্র সুসংহত হবে। তাই জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ছ. দূষণমুক্ত ও টেকসই পরিবেশ উন্নয়ন বিষয়ক কার্যক্রম
জলবায়ূ পরিবর্তনের অভিঘাত প্রশমিত করার লক্ষ্যে এবং দূষণমুক্ত পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট এবং স্বেচ্ছাব্রতী উজ্জীবকবৃন্দ সারাদেশে বিভিন্ন উদ্যোগ পরিচালনা করছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রচারাভিযান পরিচালনা, বিভিন্ন দিবস পালন ও অন্যান্য সচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণকে পরিবেশ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়।
একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে গড়ে উঠছে নানামুখী উদ্যোগ
আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টার সফলতা বহুলাংশে নির্ভর করে একটি সহায়ক পরিবেশের ওপর। স্ব-শাসিত ও শক্তিশালী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সকল স্তরে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার চর্চা এবং সৎ-যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্র পরিচালনা ইত্যাদি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমাজের বিভিন্ন স্তরের সচেতন নাগরিকদের সংগঠিত করা হচ্ছে এবং তাদের উদ্যোগে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দি হাঙ্গার প্রজেক্ট এসব উদ্যোগের ক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে। এ কাজে গণমাধ্যমকেও সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। নি¤েœ দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর কিছু উদ্যোগ তুলে ধরা হলো:
সংস্থার সাফল্যঃ এসডিজি ইউনিয়ন গড়ে তোলায় অগ্রগতি; ২. স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা; ৩. নারীর ক্ষমতায়ন; ৪. আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি; ৫. স্বেচ্ছাব্রতী তৈরি; ৬. মানুষকে নাগরিকত্ববোধে জাগ্রত করা এবং সামাজিক স¤প্রীতি প্রতিষ্ঠা
প্রশিক্ষণ, উদ্বুদ্ধকরণ সভা,উঠান বৈঠক, ক্যাম্পেইন, দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ,
Social Mobilization for Accountable Local Governance towards creating SDG (Sustainable Development Goals) Unions
কান্ট্রি-ডিরেক্টর ঃ ড. বদিউল আলম মজুমদার
আঞ্চলিক সমন্বয়কারী, বৃহত্তর ময়মনসিংহঃ জয়ন্ত কুমার কর
জেলা সমন্বয়কারী, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনাঃ এ. এন.এম. নাজমুল হোসাইন
কান্ট্রি-ডিরেক্টর- ডেপুটি কান্ট্রি-ডিরেক্টর- পরিচালক- উপপরিচালক-সিনিয়ন প্রোগ্রাম ম্যানেজার- প্রোগ্রাম ম্যানেজার- সিনিয়র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর-প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর-সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার- প্রোগ্রাম অফিসার-সহকারী প্রোগ্রাম অফিসার
নাছিমা আক্তার জলি (কর্মসূচী), স্বপন কুমার সাহা ( অর্থ ও প্রশাসন)
ময়মনসিংহ আঞ্চলিক অফিস : মোবাইল নং- ০১৬৭৫-০০৬০৯৮/০১৭৬৫-০০১৬৯৮, ইমেইল: najmul.hossain@thp.org web: www.thp.org; www.thpbd.org, www.facebook.com/THPBangladesh
আহসানুল কবির ডলার
০২-৯১৩ ০৪৭৯
infobd@thp.org
কেন্দ্রীয় অফিস: নাম: দি হাঙ্গার প্রজেক্ট
ঠিকানা: ২/২ (লেভেল-৪), মিরপুর রোড (পঞ্চম তলা), বøক: এ, মিরপুর রোড, মোহাম্মদপুর,
ঢাকা- ১২০৭।
ময়মনসিংহ আঞ্চলিক অফিস: বাড়ী : উৎকলিকা-১, ২৮(ক)/১, কে.সি রায় রোড, কাচিঁঝুলি, ময়মনসিংহ।